ভৌতিক

আমি তখন নবম শ্রেণীর ছাত্র। পাড়া থেকে আমি এবং একই পরিবারের কাকা ভাইপো পড়তে যাই। আমাদের পড়ার সময়টা ছিল সন্ধ্যার পরে এবং আমরা পড়তে যেতাম আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। পড়তে যাওয়ার সময় আমরা আলাদাভাবেই যেতাম কিন্তু ফেরার সময় একসাথেই ফিরতাম। একদিন পড়তে গিয়ে দেখি আমি একা ঐ কাকা ভাইপো কেউই পড়তে আসে নি। আমাকে একা ফিরতে হবে জেনে, স্যার একটু আগেই ছুটি দিয়েছিলেন। ফেরার পথে একটা শ্মশানের পাশ দিয়ে ফেরার সময় দূর থেকে দেখলাম একটা লোক একবার উঠছে আবার একবার শুয়ে পড়ছে। সেদিনটা ছিল বৈশাখ মাসের এক পূর্ণিমা তিথি কিন্তু ওই দৃশ্য দেখে আমার বুকের ভেতরটা গুড় গুড় করে উঠলো। তখন দাদুর কথা মনে পড়ে গেল — দাদু বলেছিলেন — কখনও ভয় পেলে “গায়ত্রী মন্ত্র” জপ করতে অথবা “হরে কৃষ্ণ” নাম জপ করতে। আমি তো ঐ মৃত মানুষের কাছে আসছি – আমার ভয় আরও বাড়তে লাগলো এবং আমি গলার স্বর আরোও জোর করে এগোতে থাকলাম। কাছে এসে ভয় ভয়েই একবার ঐ ভদ্রলোকের দিকে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি ঐ ভদ্রলোক অন্য কিছু নয় — একটা শুকনো কলাপাতা। বৈশাখী হওয়ায় ওটা যখন উড়ছে – তখন দূর থেকে মনে হচ্ছে – একটা ভদ্রলোক শুয়ে পড়লেন। আবার যখন হাওয়ার তীব্রতা কমে — তখন চাঁদের আলোয় মনে হচ্ছে একটা ভদ্র লোক দাঁড়িয়ে আছেন।

– শিশির চক্রবর্তী

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *